Header Ads

Header ADS

Term paper writing bangla part 3 /টার্ম পেপার নমুনা ৩য় অংশ


সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নাটক সমূহঃ
বিরলপ্রজ শিল্পী ওয়ালীউল্লাহ চারটি নাটক রচনা করেছেন ।
১.বহিপীর(১৯৫৫)                                                                                                                                        ২.তরঙ্গভঙ্গ (১৯৬২)                                                                                                                                   ৩.উজানে মৃত্যু(১৯৬৩)                                                                                                                ৪.সুরঙ্গ (১৯৬৪)                                                                                                                                   সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ প্রথম নাটক বহিপীর ১৯৬০ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলেও নাটকটি রচিত হয় ১৯৫৫ সালে। ১৯৫৫ সালে পি.ই.এন ক্লাবের উদ্যোগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলা নাটক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের জন্যই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বহিপীর রচনা করেন ও দ্বিতীয় পুরষ্কারে সম্মানিত হন।  তরঙ্গভঙ্গ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর দ্বিতীয় নাটক।নাটকটি তিনটি দৃশ্যে সম্পন্ন।নাটকটির চাবি লুকানো আছে শেষ দৃশ্যের সংক্ষিপ্ত পরিসরে।এই দৃশ্যে এসে নাটকটির অন্তঃতাৎপর্য সম্পূর্ন এক নতুন রুপ নেয়।পূর্বগামী দুটি দৃশ্যকে তখন বোঝা যায় আসলে স্বপ্নালোকে নিমজ্জিত।প্রথম দুটি দৃশ্যে নাটকের চরিত্রগুলো অর্ধাচ্ছাদিত, শেষ দৃশ্যে তারা দিবালোকের স্পষ্টতায় শোভামান।  তরঙ্গভঙ্গ প্রথম নাটক হতে প্রাগ্রসর,শিল্পশুদ্ধ,সতর্ক,বাংলা নাটকে সংগঠন জিজ্ঞাসার লৌকিক ধারায় স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত এবং ইউরোপীয় আধুনিক নাট্য আন্দোলন পরিমার্জিত ও পরিস্নাত।নাটকটির মৌল উপজীব্য দুঃসহ মানবিক প্রান্তিক পরিস্থিতি অতিক্রম করে ব্যক্তির অস্তিত্ববান হয়ে ওঠার কথা।সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর চারখানা নাটকের মধ্যে ভিন্ন স্বাদের সৃষ্টি। সুড়ঙ্গ(১৯৬৪)নাটকটি নাট্যকারের ঘোষনা অনুযায়ী,কিশোর কিশোরীদের জন্যরচিত কিন্তু তার অন্তপ্রেরনা ছিল আরও বিস্তৃত পরিধিকে স্পর্শ করা।দ্বিতীয়ত,আত্নমগ্ন ও সহজ বিশ্বাস প্রবন পাঠককে পরিতৃপ্তি ও পরিতুষ্টি দান করা।সুড়ঙ্গ নাটকটি মূলত রুপক নাটক।রুপক নাটকে নাট্যকারের অন্বিষ্ট হচ্ছে দৃশযমান,স্পর্শযোগ্য রুপকে সামনে রেখে রুপান্তরের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি।অদৃশ্য কোন বস্তু বা তত্ত্ব ভাবনাকে রুপকের মধ্যে ধরার জন্যই রুপক নাটকের সৃষ্টি।সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উজানে মৃত্যু বাংলা নাট্যসাহিত্যে এক বিরল ও নিঃসঙ্গ সৃষ্টি, অ্যাবাসার্ড ধর্মী বক্তব্য ও সে অনুযায়ী আঙ্গিক নির্মান,ব্যক্তির অবচেতনায় স্তরীভূত ভাব অনুভাবের রুপকল্প সৃষ্টি,শব্দ ও নৈঃশব্দ এবং রুপক ও প্রতীকের মেধাবী প্রয়োগ সাফল্য উজ্জলিত এক অনতিক্রান্ত নাটক।
বহিপীরঃ
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর প্রথম নাটক বহিপীর(১৯৬০)।এ নাটকে এ দেশীয় সমাজ চৈতন্যকে স্পর্শ করে ও আধুনিক ব্যক্তিমনের অস্তিত্ব জিজ্ঞাসার স্বরুপ উন্মোচনে নাট্যকার সচেষ্টমাত্র ৬ টি চরিত্রের সাহায্যে নাট্যকারের বক্তব্য,তার নাট্যপ্রতিভার শৈল্পিক নৈপুন্য অভিব্যক্ত করেছেন  রেশমপুরের সামান্য জমিদারির মালিক হাতেম আলীর জমিদারি সান্ধ্যআইনে নিলামে ওঠার উপক্রম,স্ত্রী খোদেজা ও পুত্র হাশেম আলীকে তিনি চিকিৎসার কথা বলে মূলত টাকা সংগ্রহের জন্য পারিবারিক বজরায় ঢাকা যাচ্ছেন।ঢাকার নিকটবর্তী ডেমরা ঘাটে বজরা উপস্থিত হলে জমিদার পত্নী খোদেজা বিপন্ন অবস্থায় তাহেরাকে দেখে সহানুভূতিশীল হয়ে তাহেরাকে তাদের বজরায় তোলে। তাহেরার ঘরে  সৎ মা ,পিতা ও তাহেরার প্রতি স্নেহার্দ নয়।তাই মেয়েকে বৃদ্ধ পীরের সাথে বিয়ে দেয়।তাহেরা বকরি ঈদের গরু ছাগল নয় তাই সাক্ষী কাবিন নামা থাকলেও জবরদস্তি মূলক ও তার অনিচ্ছায় নিস্পন্ন এ বিয়ে সে মানেনা।অতঃপর তাহেরা সবার অজান্তে তার নাবালক চাচাত ভাইয়ের সাথে ঘর ছাড়ে।পীর সাহেবও তার সহকারী হকিকুল্লাহকে সাথে নিয়ে স্ত্রীকে খুঁজতে বের হন। ঝড়ের কারনে খালের ভিতরে ঢুকবার সময় তার নৌকার সাথে জমিদারের বজরার ধাক্কা লাগে।ফলে নৌকা ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়।তাই পীর সাহেবও হাতেম আলীর বজরায় স্থান পান।হকিকুল্লাহর মাধ্যমে পীর সাহেব জানতে পারেন যে,তার স্ত্রী তাহেরা এ বজরাতেই আছে
হাতেম আলী ঢাকায় তার বাল্যবন্ধুর কাছে যায়,কিন্তু বন্ধু তাকে টাকা দিতে ব্যর্থ হয়।হাতেম আলী বজরায় ফিরে আসার পর তার উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা থেকেই পীর সাহেব বুঝতে পারে তারা দুজনেই দুঃখ ভোগ করছে।কিন্তু কেউ কারো সাহায্যে আসছে না।পীর সাহেব হাতেম আলীর উৎকণ্ঠার কারন জানতে পেয়ে হাতেম আলীকে অর্থ সাহায্য দিতে পারে এই শর্তে যে তাহেরাকে তার সাথে ফেরত দিতে হবে।কিন্তু তাহেরা জানিয়েছে যে,তাকে জোরপূর্বক স্বামীর কাছে ফিরে যেতে বাধ্য করলে সে নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্নহত্যা করবে।শেষ পর্‍্যন্ত মা-বাবা ও বহিপীরের বিরুদ্ধে গিয়ে হাশেম বজরা হতে নেমে যায়।
নাটকে উল্লেখিত ঘটনাবৃত্ত আপাতভাবে সরল ও একরৈখিক এবং তা একটি বিশেষ সমাজ বাস্তবতাকেই স্পর্শ করেছে।বহিপীর নাটকে এ দেশীয় ধর্মসম্পৃক্ত ব্যক্তি,পীর-দরবেশ-খাদেমদের অন্তর্গত চারিত্রিক অসঙ্গতি, তাদের ফ্রয়েডিয় বিচ্ছিন্নতা ও লিবিডো চেতনা উপভৌগিক মানসিকতার রুপাঙ্কনেই সচেষ্ট,সযত্ন ও সনিষ্ঠ।কিন্তু বহিপীর নাটকে আপাত সরল কাহিনীর অন্তরালে অন্তর্গত অভিপ্রেত সত্য ও অস্তিত্ত্ববাদী বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে।এ নাটকের চরিত্র তাহেরা,হাশেম আলীর পুনর্জাগরন,দায়িত্বের দায়ভার বহন করে তাদের শুদ্ধসত্তা মীমাংসিত চেতনায় সুস্থির হওয়ার মাধ্যমেই নাট্যকারের প্রতিপাদ্য অন্বিষ্ট সত্য প্রমানিত হয়েছে।
বহিপীর নাটকের সংলাপ নাটকটির পাত্র পাত্রীদের জীবনার্থ,তাদের সংকট ও ব্যক্তি চৈতন্য স্বরুপ উন্মোচনে সহায়ক।প্রত্যেকটি ছোট বড় চরিত্রকে আমরা স্বতন্ত্রভাবে চিনি।তাদের সংলাপই তাদেরকে পৃথক,নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও কণ্ঠস্বরে পরিচিত করেছে।                                                                                                                                      

No comments

Theme images by Flashworks. Powered by Blogger.