Term paper writing part 4 /টার্ম পেপার নমুনা ৪র্থ অংশ
তরঙ্গভঙ্গ ঃ
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর
দ্বিতীয় নাটক তরঙ্গভঙ্গ(১৯৬২)।নাটকটির মৌল উপজীব্য দুঃসহ মানবিক প্রান্তিক
পরিস্থিতি অতিক্রম করে ব্যক্তির অস্তিত্ববান হয়ে ওঠার কথা। তরঙ্গভঙ্গ নাটকের মৌল
সংকট আমেনাকে আশ্রয় করেই পল্লবিত ও বিস্তৃত।নাটকটি মূলত আমেনার বিচার উপাখ্যান,তার
শাস্তি বিধানের জন্যই নাটকটি পরিকল্পনা করা হয়েছে।কিন্তু নাট্যকার আমেনার মুখে কোন
সংলাপ দেন নি।ভিখারিনীর মাধ্যমে আমেনা প্রসঙ্গ ও আমেনা চরিত্র হয়েছে উন্মোচিত।
আমেনার বিরুদ্ধে
অভিযোগ দুটি-স্বামী হত্যা এবং সন্তান হত্যা।আমেনার দরিদ্র স্বামী কুতুব দুঃসহ
দারিদ্র ও চরম অভাবে পড়ে খেটে খেটে রোগে মরনাপন্ন হয়।স্বামীকে চিকিৎসার সামর্থ্য
নেই,তাই সে ধুতুরা পাতার রস বানিয়ে কুতুব শেখের কষ্টের অবসান ঘটিয়ে দেয়। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানদের অনাহার সহ্য করতে
না পেরে আমেনা নিজেই উপার্জনের চেষ্টা করে ।তার সে প্রচেষ্টা সফল না হওয়ায় শেষ
পর্যন্ত সে কোলের শিশুকে গলা টিপে হত্যা করে ।আব্দুস সাত্তার বাদী হয়ে উপর্যুক্ত
দুই খুনের কারণে আমেনার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ রুজু করেছেন । সাক্ষী- সাবুদ
প্রস্তুত ,বিচারক ও বিচার কার্্যে নিয়োজিত হয়েছেন।কিন্তু তিনি অপরাধীর
শাস্তিবিধান করতে পারেন নি;বরং বিচারক আত্নহত্যা করেছেন।বিচার কার্যে নিয়োজিত হয়ে
জজ দেখেন যে,চার সন্তানের ক্ষুধার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আমেনা গিয়েছিল মিঞাদের
বাড়িতে কাজের খোজে।কিন্তু যারপরনাই অনুরোধেও মিঞার বিবি আমেনাকে কাজ দেয় নি,কারন
তার সন্তানেরা কাজের সময় বিরক্ত করবে সে কারণে। চিন্তাগ্রস্ত আমেনাকে আব্দুস সাত্তার পরামর্শ দেয়
যে-ছোটটা এখনও অবুঝ,কিছু বোঝে না,তাই জানবেওনা কিছু। অন্তত তাকে সরিয়ে দিয়ে একটা
সমস্যার সমাধান করুক। শেষে আমেনা আবদুস সাত্তারের প্রস্তাব গ্রহন করে।
বিচারক হসাবে অপরাধীকে চিহ্নিত করা ও তার উপযুক্ত শাস্তিবিধান জজের পেশাগত,নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব।কিন্তু প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গিয়ে,দ্বন্দ শংসয় ও পরিনামভীতির রক্তনদী পেরিয়ে অর্থাত,দুঃসহ মানবিক প্রান্তিক পরিস্থিতি অতিক্রম করে স্বাধীন নির্বাচনের মাধ্যমে অস্তিত্ববান হয়ে উঠতে , মিঞার বিবি ও আবদুস সাত্তারের শাস্তি বিধানে অসমর্থ হয়ে জজ নিজে হয়েছেন আত্নঘাতী।শর্তবন্দি সমাজের বিচারক ন্যায় বিচার প্রদানে ব্যার্থ অস্তিত্বের দায়ভার বহনে অসমর্থ হয়েই অস্তিত্ব থেকে পলায়ন।সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যকর্ম বিবেচনায় অস্তিত্ববাদী চিন্তা যেমন মূল প্রতিবাদের সাথে অনিবার্য ভাবে প্রসঙ্গ বদ্ধ হয়েছে।তেমনি তার সৃষ্টির অন্তর্বয়ন,আঙিক-বীক্ষনে আধুনিক ইউরোপীয় সাহিত্যের ফর্ম নিরীক্ষা সমান গুরুত্বে হয়েছে উপস্থাপিত।তরঙ্গভঙ্গ এর কাহিনী স্বামী ও সন্তান হত্যার অপরাধে আমেনার বিচার দৃশ্য উন্মোচনের মাধ্যমে।কিন্তু হত্যার ঘটনাদ্বয় এসেছে ফ্লাশব্যাকে,ভিখারিনী ও আবদুস সাত্তারের সংলাপের মাধ্যমে।কিন্তু হত্যা দৃশ্যের বিবরন উঠে আসায় তরঙ্গভঙ্গ ভিন্ন অভিধা পেয়েছে,লাভ করেছে প্রকাশবাদী পরিচয়।এ নাটকে মোট ৪ টি মৃত্যু ঘটনা আছে-আমেনার স্বামী ও সন্তানের মৃত্যু এবং উত্তেজিত জনতা কতৃক আমেনার হত্যা ও জজের স্বেচ্ছাপ্রনোদিত মৃত্যু।মৃত্যু ভাবনা প্রকাশবাদী নাটকের একটি লক্ষনিয় প্রবনতা।মৃত্যু যে রুপেই আসুকনা কেন,প্রকাশবাদী নাটকের এটি একটি লক্ষনীয় প্রবনতা।
বিচারক হসাবে অপরাধীকে চিহ্নিত করা ও তার উপযুক্ত শাস্তিবিধান জজের পেশাগত,নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব।কিন্তু প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গিয়ে,দ্বন্দ শংসয় ও পরিনামভীতির রক্তনদী পেরিয়ে অর্থাত,দুঃসহ মানবিক প্রান্তিক পরিস্থিতি অতিক্রম করে স্বাধীন নির্বাচনের মাধ্যমে অস্তিত্ববান হয়ে উঠতে , মিঞার বিবি ও আবদুস সাত্তারের শাস্তি বিধানে অসমর্থ হয়ে জজ নিজে হয়েছেন আত্নঘাতী।শর্তবন্দি সমাজের বিচারক ন্যায় বিচার প্রদানে ব্যার্থ অস্তিত্বের দায়ভার বহনে অসমর্থ হয়েই অস্তিত্ব থেকে পলায়ন।সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যকর্ম বিবেচনায় অস্তিত্ববাদী চিন্তা যেমন মূল প্রতিবাদের সাথে অনিবার্য ভাবে প্রসঙ্গ বদ্ধ হয়েছে।তেমনি তার সৃষ্টির অন্তর্বয়ন,আঙিক-বীক্ষনে আধুনিক ইউরোপীয় সাহিত্যের ফর্ম নিরীক্ষা সমান গুরুত্বে হয়েছে উপস্থাপিত।তরঙ্গভঙ্গ এর কাহিনী স্বামী ও সন্তান হত্যার অপরাধে আমেনার বিচার দৃশ্য উন্মোচনের মাধ্যমে।কিন্তু হত্যার ঘটনাদ্বয় এসেছে ফ্লাশব্যাকে,ভিখারিনী ও আবদুস সাত্তারের সংলাপের মাধ্যমে।কিন্তু হত্যা দৃশ্যের বিবরন উঠে আসায় তরঙ্গভঙ্গ ভিন্ন অভিধা পেয়েছে,লাভ করেছে প্রকাশবাদী পরিচয়।এ নাটকে মোট ৪ টি মৃত্যু ঘটনা আছে-আমেনার স্বামী ও সন্তানের মৃত্যু এবং উত্তেজিত জনতা কতৃক আমেনার হত্যা ও জজের স্বেচ্ছাপ্রনোদিত মৃত্যু।মৃত্যু ভাবনা প্রকাশবাদী নাটকের একটি লক্ষনিয় প্রবনতা।মৃত্যু যে রুপেই আসুকনা কেন,প্রকাশবাদী নাটকের এটি একটি লক্ষনীয় প্রবনতা।
উজানে মৃত্যুঃ
বিশ শতকের মানুষের
জীবনে
কোন
গল্প
নেই।ইশ্বরহীন
পৃথিবীতে
সে
নিয়ত
একা
অনিকেতবোধ, অপার
শূন্যতা
বহন
করেই
সে
বেঁচে
আছে।ভোগ
করে
চলেছে
তারই
পুনরাবৃত্ত
জীবনের
গ্লানি,দুঃখ
বোধ
ও
বিচ্ছিন্নতার
যন্ত্রনা।‘উজানে
মৃত্যু’ এই
বিপন্ন
মানবচৈতন্যের
কথাবস্তু।এ
নাটকেও
তাই
কোন
গল্প
নেই।নাটকটি
গল্প
হীনদের গল্প,ঘটনাহীনদের
বিচূর্নিত
ঘটনাপুঞ্জের
সমাহার,নৌকাবাহক,কালো
ও
সাদা
পোশাক
পরিহিতের
দূর্ভার
জীবনানুভূতির
প্রতীতি। স্ত্রী,তিন
ছেলে,বেচে
থাকার
জন্য
উর্বর
জমি-সবই
নৌকাবাহকের
ছিল।কিন্তু
এখন
সে
সর্ব
রিক্ত।
কোনো কিছুই
তার
জন্য
অপেক্ষা
করে
নেই।সে
এখন
কালের
করাল
গ্রাসে
পতিত,এক
পরাজিত
ও
বেদনাময় সত্তা।দীর্ঘশ্বসিত
ও
অতিমাত্রায়
প্রলম্বিত
জীবনের
দায়ভার
বহনের
ক্ষমতাও
তার
নেই।তাই
শান্তি
ও
স্বস্তির
জগতে
যাওয়ার
জন্যেই
তার
নৌকা
বাওয়া,উজানে
যাত্র। কিন্তু
পৃথিবীতে
তেমন
কোনো
আনন্দকর
স্বস্তি
দায়ক
জায়গা
নেই,তাই
নৌকাবাহকের
যাত্রা অনন্ত
পথে,অর্থাৎ
স্বনির্বাচিত
মৃত্যুকে
আহ্বান
জানানোর
জন্যেই
নৌকা
বাহকের
গুনটানা।মূলত,প্রতিষ্ঠিত
ও
পরিবর্তিত
সমাজ
ব্যাবস্থা যখন
মানুষকে
বিপর্যস্ত,ক্রমশ
নিরস্তিত্ব
ও
নিমজ্জিত
করে
তখন
বহমান
সমাজ
চৈতন্যের
সাথে
অভিন্ন
হয়ে
অস্তিত্ব
ঘোষনা
সম্ভব
হয়
না।এ
অবস্থায়
অস্তিত্বকামী
মানুষ
হয়ে
পড়ে
নিঃসঙ্গ।ফলে
তাকে
যাত্রা
করতে
হয়
সমাজ
স্রোতের
বিরুদ্ধে
উজানে নৌকা
বাহক
এক
সক্রিয়
নিয়তিবাদী।অন্য
দুটি
চরিত্র-সাদা
পোশাকধারী
ও
কালো
পোশাকধারী
নৌকাবাহক
চরিত্রকে
পরিস্ফুট
ও
উজ্জল
করেছে,তাদের
সমস্ত
কথা
ও
কাজ
নৌকাবাহককে
ঘিরেই
। সাদা
পোশাকধারী
বিশ্বাসী
তার
কাছে
কিছুই
অর্থহীন
নয়,সে
প্রানপনে
চেষ্টা
করে
দুর্ভাগা
নৌকাবাহকের
অস্তিত্বকে
অর্থবান
করে
তুলতে।কালো
পোশাকধারী
সত্যদর্শী
ও
ত্রিকালদর্শী,সে
অবিশ্বাসী চারধারে
অর্থহীনতাই
সে
দ্যাখে,পরিনামে
তার
কথাই
সত্য
হ্য।নাট্যকার
সাদা
পোশাক
ও
কালো
পোশাক দিয়ে
ব্যাক্তির
নামোল্লেখ
না
করে-যথাক্রমে
বিশ্বাস
ও
সক্রিয়তা
এবং
অবিশ্বাস
ও
নিষ্কিয়তার
রং
লাগিয়েছেন।ছোট
এই
নাটকটিতে
কয়েকটি
গভীরার্থবহ
শব্দ
আছে-যাওয়া/যাত্রা,কল্পনা,অর্থ,মৃত্যু, দুঃখ,স্বাভাবিক,নৌকা,এগুলো
রচনার
চাবিশব্দ ।যাত্রা
প্রসঙ্গে
দেখা
যায়
কোথা
থেকে
আসা,কোথায়
যাওয়া
সবই
অনিশ্চিত। বস্তুত,মৃত্যু
একটি
জীবনদর্শন,ব্যাক্তির
পরম
প্রত্যয়।তাই
মৃত্যু
কখনোই
ব্যক্তিকে
সীমাবদ্ধ
করে
না।মৃত্যু
ব্যাক্তির
অস্তিত্ব
অনুভবের
আভাস।নৌকাবাহকের
পরিনতির
জন্য
কেউ দায়ী
নয়।সে
নিজের
সত্তার
মধ্যেই
লালন
করেছে
এক
বৈনাশিক
শক্তি।ক্রমাগত
বিরুদ্ধতার
মোকাবেলা
করতে
করতে
গুনটানা
মাঝির
যে,
মৃত্যু
তা
আমাদের
প্রতিটা
মানুষের
মৃত্যুকেপ্রতীকায়িত
করে।শেষ
বিচারে
‘উজানে মৃত্যু’ প্রতীকী
নাটক।
উজানে
মৃত্যুর
সংলাপ
কার্য
কারনহীন,
বিষম
কালচেতনা
প্রবাহের
ভাষ্য
; তাদেরই কথামালার
সমষ্টি।
ফলে
তা
অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই
কোন
অর্থপূর্ন
বক্তব্যের
সন্ধান
দেয়
না।উজানে
মৃত্যুর
মঞ্চ
পরিকল্পনা
অ্যাসার্ডবাদীদেরই
অনুরুপ,কিন্তু
তাতে
কোন
কষ্ট
কল্পনার
স্থান
নেই।লৌকিক
পরিবেশকে
ব্যবহার
করে,
পরিচিতি
দৃশ্যসজ্জার
মাধ্যমেই
নাট্যকার
মঞ্চ
সাজিয়েছেন।তাঁর
সজ্জিত
মঞ্চ
সাধারন
উর্ধ্ব
এক
মনোবাস্তবতারই জম্ন
দিয়েছে।
মূলত
নাট্যকারের
মঞ্চসজ্জা
অ্যাবাসার্ড
পদ্ধতিতে
বিন্যস্ উজানে
মৃত্যুর
প্রকৃত
মঞ্চ
বাইরে
নয়,দর্শক
পাঠকের
অন্তর।
No comments