How to write a term paper / টার্ম পেপার নমুনা ২য় অংশ
কবি পরিচিতি
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের এক স্তম্ভপ্রতিম কথাশিল্পী।কল্লোলযুগের ধারাবাহিকতায় তাঁর আবির্ভাব হলেও তিনি ইউরোপীয় আধুনিকতায় পরিশ্রুত নতুন কথাসাহিত্য বলয়ের শিলান্যাস করেন। জগদীশ গুপ্ত,মানিক
বন্দোপাধ্যায় প্রমুখের উত্তরসূরি এই কথাসাহিত্যিক অগ্রজদের কাছ থেকে পাঠ গ্রহণ করলেও বিষয়, কাঠামো ও ভাষা-ভঙ্গীতে নতুন ঘরানার জন্ম দিয়েছেন।
জন্ম ও পরিবারঃ তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর এলাকায়, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট। তাঁর পিতা সৈয়দ আহমাদুল্লাহ ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা; মা নাসিম আরা খাতুনও সমতুল্য উচ্চশিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার থেকে এসেছিলেন, সম্ভবত অধিক বনেদি বংশের নারী ছিলেন তিনি। ওয়ালীউল্লাহর আট বছর বয়সের সময় তার মাতৃবিয়োগ ঘটে। দুই বছর পর তার বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের করটিয়ায়। বিমাতা এবং বৈমাত্রেয় দুই ভাই ও তিন বোনের সঙ্গে ওয়ালীউল্লাহর সম্পর্ক কখনোই অবনতি হয় নি। তার তেইশ বছর বয়সকালে কোলকাতায় চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যান। তার পিতৃমাতৃবংশ অনেক শিক্ষিত ছিলেন। বাবা এম এ পাশ করে সরাসরি ডেপুটি মেজিস্ট্রেট চাকুরিতে ঢুকে যান; মাতামহ ছিলেন কোলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে পাশ করা আইনের স্নাতক; বড়ো মামা এমএবিএল পাশ করে কর্মজীবনে কৃতি হয়ে খানবাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন এবং তার স্ত্রী (ওয়ালীউল্লাহর বড়ো মামী) ছিলেন নওয়াব আবদুল লতিফ পরিবারের মেয়ে, উর্দু ভাষার লেখিকা ও রবীন্দ্রনাথের গল্প নাটকের উর্দু অনুবাদক
শিক্ষাঃ পারিবারিক পরিমণ্ডলের সাংস্কৃতিক আবহাওয়া সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর মনন ও রুচিতে প্রভাব ফেলেছিলো। পিতার বদলির চাকরির সুবাদে ওয়ালীউল্লাহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অংশ দেখার সুযোগ লাভ করেন।ওয়ালীউল্লাহর শিক্ষাজীবন কেটেছে দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। ১৯৩৯ সালে তিনি কুড়িগ্রাম উচ্চবিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক, এবং ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তার আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি ছিলো ডিস্টিঙ্কশনসহ বিএ এবং অর্থনীতি নিয়ে এমএ ক্লাশে ভর্তি হয়েও শেষে পরিত্যাগ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি একাধিক মাসিকপত্রে লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেন। পাকিস্তান সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাথে জড়িত থাকার সূত্রে কর্মজীবনের বড় একটা সময় তিনি বিদেশে কাটান। ১৯৫৫ সালে তিনি ফরাসি আন মারী-র সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন।
কর্ম
জীবনঃ
ছাত্র অবস্থাতেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। বাধ্য হয়ে নয়, স্ব-ইচ্ছায়। ১৯৪৮ সালে তিনি কলকাতার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় চাকুরি নেন। এ বছর ২৬ জুন তার পিতা প্রয়াত হন। তার তিনমাস আগে, মার্চ মাসে, তার প্রথম গ্রন্থ গল্পসংকলন নয়নচারা প্রকাশিত হয়।
নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেছিলেন ১৯৪১-৪২ সাল
নাগাদ। এমন মনে করার সঙ্গত কারণ আছে
যে, তিনি ভবিষ্যতে লেখকবৃত্তি বেছে নিতে চেয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের দেশ
বিভাগের পরই তিনি দ্য
স্টেটসম্যান-এর চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকা চলে আসেন এবং
সেপ্টেম্বরে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের সহকারী বার্তা-সম্পাদকের চাকুরি নেন।
তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানের করাচি কেন্দ্রের বার্তা সম্পাদক হয়ে ঢাকা ছাড়েন ১৯৪৮ সালে। সেখান থেকে নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসে থার্ড সেক্রেটারির পদমর্যাদায় প্রেস-আতাশে হয়ে যান ১৯৫১-তে।
অতঃপর একই পদে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বদলি হন
১৯৫২-এর শেষের দিকে। ১৯৫৪ সালে ঢাকায় ফিরে এলেন তথ্য অফিসার হিসেবে ঢাকাস্থ আঞ্চলিক তথ্য-অফিসে। ১৯৫৫ সালে পুনরায় বদলি করাচির তথ্য মন্ত্রণালয়। এরপর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার তথ্য পরিচালকের পদাভিষিক্ত হয়ে, ১৯৫৬ সালের জানুয়ারিতে, দেড় বছর
পর পদটি বিলুপ্ত হয়ে গেলে জাকার্তার পাকিস্তানি দূতাবাসে দ্বিতীয় সেক্রেটারির পদমর্যাদায় প্রেস-আতাশে হয়ে রয়ে গেলেন ১৯৫৮’র
ডিসেম্বর অবধি। এরপর ক্রমান্বয়ে করাচি-লন্ডন-বন, বিভিন্ন পদে ও
বিভিন্ন মেয়াদে। ১৯৬১ সালের এপ্রিলে ফার্স্ট সেক্রেটারির পদমর্যাদায় প্রেস-আতাশে হিসেবে যোগ দিলেন প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসে।
অত:পর দূতাবাসের চাকুরি ছেড়ে ১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট ইউনেস্কোতে চুক্তিভিত্তিক প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট পদে যোগ দেন। চাকুরিস্থল ছিল প্যারিস শহরে ইউনেস্কো’র সদরদপ্তরে। ১৯৭০ সালের ৩১
ডিসেম্বর ইউনেস্কোতে তার চাকুরির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অবসরগ্রহণের নিয়ম হিসাবে পাকিস্তান সরকার ইসলামাবাদে তাঁকে বদলি করে। তবে
তিনি ইসলামাবাদে না গিয়ে প্যারিসেই থেকে গিয়েছিলেন।
বিবাহ ও সংসারঃ
তার ফরাসিনী স্ত্রী’র নাম আন্-মারি লুই রোজিতা মার্সেল তিবো। তাদের পরিচয় হয় সিডনিতে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তখন পাকিস্তানি দূতাবাসে কর্মরত, অন্যদিকে আন্-মারি কর্মরত ছিলেন ফরাসি দূতাবাসে। দেড়-দু বছরের সখ্যতা ও ঘনিষ্টতা শেষাবধি বৈবাহিক বন্ধনের পরিণতি লাভ করে। ওয়ালীউল্লাহ তখন করাচিতে। সেখানেই ১৯৫৫ সালের ৩ অক্টোবর তাদের বিয়ে হয়। ধর্মান্তরিতা বিদেশিনীর নাম হয় আজজা মোসাম্মত নাসরিন। নবলব্ধ নামকে বিয়ের কাবিননামাতেই বিসর্জন দিয়েছিলেন দু-জনে। তাদের দু সন্তান। প্রথমে কন্যা সিমিন ওয়ালীউল্লাহ, তার পরে পুত্র ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ।
জীবনাবসানঃ
অত্যন্ত অকালে প্রয়াত হন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে, ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে তাঁর মৃত্যু হয়, গভীর রাতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়। প্যারিসের উপকণ্ঠে তারা একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, সেখানেই ঘটনাটি ঘটে এবং ওখানেই সমাহিত করা হয় তাঁকে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রাজনীতিসম্পৃক্ত মানুষ ছিলেন না, কিন্তু সমাজ ও রাজনীতিসচেতন
ছিলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চাকরিহীন, বেকার। তা
সত্ত্বেও বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করেছেন, সঙ্গতিতে
যতোটুকু কুলোয় তদানুযায়ী টাকা পাঠিয়েছেন কোলকাতায় মুক্তিযুদ্ধ তহবিলে।
তার সন্তানদের ধারণা, তাদের
পিতার অকাল মৃত্যুর একটি কারণ দেশ নিয়ে দুশ্চিন্তা, আশঙ্কা ও হতাশা। তিনি
যে স্বাধীন মাতৃভূমি দেখে যেতে পারেন নি সে বেদনা তার ঘনিষ্ঠ মহলের সকলেই বোধ করেছেন।
তার ছাত্রজীবনের বন্ধু পরবর্তীতে স্বাধীন ও সার্বভৌম
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, আবু সাঈদ চৌধুরী ওয়ালীউল্লাহ'র মৃত্যুর
সাত মাস পরে তার স্ত্রীকে এক আধা সরকারি সান্ত্বনাবার্তা পাঠিয়েছেন। তাতে
লেখা ছিল,
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, মি. ওয়ালীউল্লাহর মাপের প্রতিভার সেবা গ্রহণ থেকে এক মুক্ত বাংলাদেশ বঞ্চিত হলো; আমাকে এটুকু বলার সুযোগ দিন যে আপনার ব্যক্তিগত ক্ষতি বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষতি।
পুরস্কার একুশে পদক, (মরণোত্তর),
১৯৮৪। আদমঅজী পুরস্কার , ১৯৬৫ সালে, 'দুই তীর ও অন্যান্য গল্প'-এর জন্য। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার , ১৯৬১ সালে উপন্যাসে বিশেষ অবদানের জন্য। পি,ই,এন পুরষ্কার পান 'বহিপীর' নাটকের জন্য, ১৯৫৫ সালে। ঢাকায় পি.ই.এন ক্লাবের উদ্যোগে এক আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে বাংলা নাটকের প্রতিযোগিতায় 'বহিপীর' দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে পুরস্কৃত হয় । জাতীয় চলচিত্র পুরষ্কার, ২০০১ শ্রেষ্ঠ কাহিনীষ্কার।
No comments